সাম্প্রতিক কালের সাড়াজাগানো চলচ্চিত্রের মধ্যে নিঃসন্দেহে “তারে জামিন পার” অন্যতম।অনেক দেরিতে হলেও অবশেষে দেখা হল।
তারে জামিন পার মূলত এক বিশেষ ধরণের শিখন প্রতিবন্ধীদের (Learning Disable ) উপজীব্য করে বানানো চলচ্চিত্র। ৮-৯ বছরের ঈষাণ শর্মা (দার্শিল সাফারি) পড়াশোনায় দুর্বল হওয়ার কারণে ঘরে, বাইরে সব জায়গায় পদে পদে লাঞ্ছিত। সকলেরই ধারণা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈষাণ পড়াশোনা করে না। ক্লাসে বসে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। অবনতির চূড়ান্ত পর্যায়ে সাধারণ স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হল বোর্ডিং স্কুলে। সেখানেও অবস্থা তথৈবচ। হঠাৎ করেই একরাশ শীতল হাওয়ার মত স্কুলে আসলেন নতুন পার্টটাইম ড্রয়িং শিক্ষক নিকুম্ভ স্যার ( আমির খান ), যিনি নিজেও ঈষাণের মত এক দুঃসহ শৈশব কাটিয়েছেন, ডিসলেক্সিয়া রোগের রোগী হয়ে।তারই সাহচর্যে বেড়ে ওঠে ঈষাণ, সব প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে।
ছবি হিসেবে গড়পড়তা বলিউডি ছবির চেয়ে অনেক এগিয়ে “তারে জামিন পার”। আমির খানের প্রথম পরিচালনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। অধিকাংশ শটেই যত্নের ছোঁয়া রয়েছে।কাহিনীর মধ্যে কিছুটা গতির ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। যে গতিতে ঈষাণের দুর্দশা চিত্রায়িত হয়েছে, সে তুলনায় একটু বেশি দ্রুত সেই অচলাবস্থাত উত্তরণ দেখানো হয়েছে। আগের যুগের সেই বাংলা কিংবা হিন্দি ছবির মত এক গানেই কিংবা সেলাই মেশিন চালাতে চালাতে নায়ক নায়িকা বড় হয়ে যাওয়ার মত, এক গানেই রাতারাতি ঈষাণের উত্তরণ কিছুটা তাড়াহুড়া বলেই মনে হয়। সর্বোপরি, সিনেমার কাহিনীর বাধন এত শক্ত ছিলো যে, আরো ১৫-২০ মিনিট দৈর্ঘ বাড়ানো হলে তা সিনেমার বিশেষ সৌষ্ঠবহানি করতে বলে মনে হয় না।
সিনেমাতে সকলেই মোটামুটি ভালো অভিনয় করেছেন। তবে যার কথা বিশেষভাবে বলতে হয় তিনি ঈষাণ অর্থাৎ দার্শিল সাফারি। জীবনের প্রথম ছবিতেই তিনি বাজিমাত করেছেন। শিখন প্রতিবন্ধী শিশুর চরিত্রে তার অভিনয় বিশেষত মুখের যে অভিব্যক্তি তিনি দিয়েছেন তা অসাধারণ। আমির খান স্বভাবসুলভ ভাবেই ভালো অভিনয় করেছেন, তবে তার চরিত্রের একদম শুরুতে গানটার প্রয়োজনীয়তা ঠিক বোঝা যায়নি, ওরকম নর্তন কুর্দন বাদ দিলে, ছবিটা আরো বাস্তবসম্মত হত বলেই বোধ হয়।
তবে সামগ্রিকভাবে তারে জামিন পার, মনে দাগ কেটে যাওয়ার মত ছবি। আপনি একবার হলেও ভাবতে বাধ্য হবেন আপনার পাশের শিশুদের নিয়ে, তাদের মধ্য লুকানো প্রতিভা নিয়ে। শিখন প্রতিবন্ধকতা আমাদের সমাজের এক পরিচিত রোগ অথচ আমরা খুব কম লোকই সে ব্যাপারে জানি। তাই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই চলচ্চিত্রের ভূমিকা নিঃসন্দেহে তুলনাহীন।
সর্বোপরি, সময় এবং পয়সা উসুল হওয়ার মত একটি ছবি। অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়ত এমনি আরো কিছু মাস্টারপীস আশা করতে পারি আমিরের থেকে।